লিওনেল মেসি আজকের দিনটি কখনো ভুলতে পারবেন না। আবার আজকের দিনেই একটি মুহূর্ত তিনি সব সময় ভোলার চেষ্টার করবেন, কিন্তু পারবেন না।
মেসির ক্যারিয়ারে তেমন বিতর্কিত কিছু নেই বলেই ধারণাটা এমন—সেদিনের সেই লাল দাগটা তাঁর নামের পাশে বেমানান। তবু রেফারির সিদ্ধান্তই তো চূড়ান্ত।
ফেরেঙ্ক পুসকাস স্টেডিয়ামে রেফারি সেদিন বাঁশি বাজিয়েছিলেন মেসির বিপক্ষে। হাঙ্গেরির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ২–১ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। ৬৪ মিনিটে ফরোয়ার্ড লিসান্দ্রো লোপেসকে তুলে মেসিকে নামান আর্জেন্টিনা কোচ হোসে পেকারম্যান।
কোচ ও বদলি হয়ে মাঠ ছাড়া খেলোয়াড়ের নাম জেনে নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন, কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে?
হ্যাঁ, সেই ম্যাচটাই। হাঙ্গেরি ডিফেন্ডার ভিলমোস ফনজাক পেছন থেকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন মেসিকে। দৌড়ের সময় তাঁকে ছাড়াতে গিয়ে হাত দিয়ে পেছনে একটা গুঁতা মেরেছিলেন তিনি।
তৎক্ষণাৎ লাল কার্ড, সেটিও বদলি হয়ে নামার এক মিনিটের মধ্যে! জাতীয় দলের হয়ে এমন অভিষেক ম্যাচ কেউ কল্পনাও করে না, কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের যাত্রা শুরু হয়েছিল এভাবে, ১৬ বছর আগে আজকের দিনে।
সেই যাত্রায় মেসির সঙ্গী ছিলেন কারা? তাঁদের এখন কি খবর?
আগে সেই ম্যাচের একাদশটা জানানো যাক—গোলকিপার: লিও ফ্রাঙ্কো। ডিফেন্ডার: রবার্তো আয়ালা, গাব্রিয়েল হেইঞ্জ, লিওনেল স্কালোনি ও হুয়ান পাবলো সোরিন। মিডফিল্ডার: লুচো গঞ্জালেস, লুকাস বের্নাদি, ম্যাক্সি রদ্রিগেজ, আন্দ্রেস দালেসান্দ্রো। ফরোয়ার্ড: এর্নান ক্রেসপো ও লিসান্দ্রো লোপেস।
এই একাদশে মেসির পাশাপাশি ৮১ মিনিটে লুচো গঞ্জালেসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন পাবলো জাবালেতা। ৮৯ মিনিটে দালেসান্দ্রোর বদলি হয়ে নামেন মারিও সান্তানা।
গোলকিপার লিও ফ্রাঙ্কোকে দিয়ে শুরু করা যাক। মায়োর্কা ও আতলেতিকো মাদ্রিদে খেলা এ গোলকিপার ২০১৬ সালে ছাড়েন পেশাদার ফুটবল। ২০১৮ সালে স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগের দল উয়েস্কার কোচের দায়িত্ব নিয়ে বেশি দিন টিকতে পারেননি।
রবার্তো আয়ালা তাঁর প্রজন্মেরই অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক। ভ্যালেন্সিয়া, এসি মিলান মাতানো সাবেক ডিফেন্ডার ২০১১ সালে পেশাদার ফুটবল ছাড়েন। ২০১৯ সালের ১০ জুন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে সহকারী কোচের দায়িত্ব পান তিনি। এখনো সে দায়িত্বেই আছেন।
গাব্রিয়েল হেইঞ্জ পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ ঘুরে ২০১৪ সালে নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলা ছাড়েন। কোচিংয়ে নামার পর কদিন আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল আটলান্টা ইউনাইটেডের কোচ।
বাজে পারফরম্যান্স ও দলের অন্তঃকোন্দল—বিশেষ করে আটলান্টায় বড় তারকা বনে যাওয়া ভেনেজুয়েলান স্ট্রাইকার ইয়োসেফ মার্তিনেজকে আচরণগত কারণে দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে না দেওয়ার জেরে চাকরি হারান।
লিওনেল স্কালোনি তো এখন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসিদেরই কোচ। ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে আর্জেন্টিনা দলে পালাবদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্কালোনি।
কদিন আগেই স্কালোনির হাত ধরে দেশের হয়ে প্রথম শিরোপার দেখা পান মেসি। ব্রাজিলের মাটিতে, ব্রাজিলেরই ফুটবল-তীর্থ মারাকানায় নেইমারের ব্রাজিলকে ফাইনালে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জেতে আর্জেন্টিনা, ঘোচে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা–খরা।
হুয়ান পাবলো সোরিন ২০০৯ সালে ক্রুজেইরোয় খেলতেন, এরপর খেলা ছাড়েন। পরে জড়িয়েছেন খেলা সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
মেসির অভিষেক ম্যাচের মিডফিল্ডারদের মধ্যে লুচো গঞ্জালেস গত মে মাসে পেশাদার ফুটবল ছাড়েন। তার আগে ব্রাজিলের ক্লাব আতলেতিকো পারানায়েজের খেলেছেন। লুকাস বের্নাদি ২০১৪ সালে নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে অবসর নেন।
এরপর কোচিংয়ে নেমে ২০১৯ সালে এ পেশা থেকে সরে এসে আর্জেন্টিনায় নিজের সাবেক ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ বছরের জুলাইয়ে দায়িত্বটা পান তিনি।
আতলেতিকো মাদ্রিদ ও লিভারপুলে খেলা উইঙ্গার ম্যাক্সি রদ্রিগেজ ২০১৯ সালে নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। এ বছরের জুনে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। আন্দ্রেস দালেসান্দ্রোও এখনো খেলছেন। এ বছর উরুগুয়ের ক্লাব নাসিওনালে যোগ দেন তিনি।
পার্মা, চেলসি ও ইন্টার মিলান মাতানো ক্রেসপো এখন ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর কোচ। কোচিংয়ে ক্রেসপো একেবারে খারাপ করছেন না। গত মৌসুমে আর্জেন্টিনার অখ্যাত ক্লাব দিফেন্সা ই জুস্তিসিয়াকে দক্ষিণ আমেরিকান মহাদেশীয় ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় প্রধান শিরোপা কোপা সুদামেরিকানা (ইউরোপে যেটি ইউরোপা লিগ) জিতিয়েছেন।
সে ম্যাচে মেসি যাঁর বদলি হয়ে নেমেছিলেন, সেই লিসান্দ্রো লোপেস খেলছেন আর্জেন্টাইন ক্লাব রেসিংয়ে। আর বদলি খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্য দুজনের একজন জাবালেতা গত বছর ছেড়েছেন পেশাদার ফুটবল। মারিও সান্তানা বর্তমানে ইতালিয়ান ক্লাব পার্লেমোর যুব দলের কোচ।
এদিকে মেসি ক্লাব ফুটবলে প্রায় সবকিছু জিতে আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপার দেখাও পেয়েছেন। ৩৪ বছর বয়সেও তিনি এখনো বিশ্ব ফুটবলে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কদিন আগে ক্লাব ফুটবলকে নাড়িয়ে দিয়ে বার্সেলোনা ছেড়ে ‘ফ্রি ট্রান্সফারে’ যোগ দিয়েছেন বন্ধু নেইমারের ক্লাব পিএসজিতে।



0 Comments